বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ পূর্বাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : শেষ ম্যাচে বোলিং তেমন ভালো হলো না, দায়িত্ব নিলেন ব্যাটসম্যানরা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন তামিম ইকবাল। অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে করলেন সেঞ্চুরি। ফেরার ম্যাচে কার্যকর এক ইনিংস খেললেন নুরুল হাসান সোহান। দল পেল এক অনির্বচনীয় স্বাদ। প্রথমবার জিম্বাবুয়েকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।
তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের ২৯৮ রান পেরিয়ে গেছে ১২ বল বাকি থাকতেই।
রেজিস চাকাভা, সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্লের ফিফটিতে তিনশর কাছাকাছি সংগ্রহ গড়েও বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা ১৯তম হার এড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। তামিমের চতুর্দশ সেঞ্চুরিতে দেশটির বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পেল নিজেদের পঞ্চাশতম জয়।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে আরেকটি সিরিজ থেকে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। এর আগে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ৩০ পয়েন্ট পেয়েছিল তামিমের দল।
চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন তামিম ও লিটন দাস। তাদের ব্যাটে এক বছরের বেশি সময় পর দল পায় প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া উদ্বোধনী জুটি।
শুরু থেকে সাবলীল ছিলেন লিটন। একটু সাবধানী ছিলেন তামিম। অষ্টম ওভারে টেন্ডাই চাতারাকে ছক্কার পর দুই চার মেরে ডানা মেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে।
থিতু হওয়ার পর এগিয়ে গেছেন তামিম। পারেননি প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন। ওয়েসলি মাধেভেরেকে সুইপ করে তিনি ক্যাচ দিলে ভাঙে ৮৪ বল স্থায়ী ৮৮ রানের জুটি।
৪৬ বলে ফিফটি করার পর প্রায় একই গতিতে ছুটে যান তামিম। আগের ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার আরেকটি পঞ্চাশ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। থিতু হয়ে এবার ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব। লুক জঙ্গুয়ের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ভাঙে ৫৯ রানের জুটি।
আগের দুই ম্যাচে আলগা শটে আউট হওয়া মোহাম্মদ মিঠুন ভুগছিলেন এদিনও। কিন্তু রানের গতিতে ভাটার টান আসতে দেননি তামিম। বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে করেন ওয়ানডেতে নিজের দ্রুততম সেঞ্চুরি, ৮৭ বলে।
এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম। ডনাল্ড টিরিপানোর বলে কট বিহাইন্ড হয়ে শেষ হয় বাঁহাতি এই ওপেনারের ইনিংস। ৯৭ বলে তিন ছক্কা ও আট চারে তিনি করেন ১১২ রান।
প্রথম তিন উইকেটে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি পাওয়া বাংলাদেশের পরের জুটির স্থায়ীত্ব কেবল এক বল। নিজের দুইশতম ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান মাহমুদউল্লাহ। টিরিপানোর বলে ব্যাটের নিচের দিকের কানায় লেগে ধরা পড়েন চাকাভার গ্লাভসে।
সাড়ে চার বছর পর সুযোগ পাওয়া সোহান কঠিন সময়ে আসেন ক্রিজে। তবে চাপকে পাত্তাই দেননি এই কিপার-ব্যাটসম্যান। বাউন্ডারি মেরে ঠেকান টিরিপানোর হ্যাটট্রিক। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে উড়িয়ে দেন সব চাপ।
মিঠুন খেলে যান একই ভাবে, কিন্তু সোহানের ব্যাটে রান আসতে থাকে দ্রুত। মাধেভেরেকে ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় মিঠুনের ভোগান্তি। ভাঙে ৬৪ রানের জুটি।
আফিফ হোসেনকে নিয়ে বাকিটা সহজেই সারেন সোহান। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে ৬ চারে ৩৯ বলে অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। তার সঙ্গে ৩৪ রানের জুটিতে আফিফের অবদান ১৭ বলে ২৬।
দুই জনের বোঝাপড়া ছিল দারুণ। রানিং বিটুইন দা উইকেট ছিল দুর্দান্ত। তাদের শেষের চমৎকার ব্যাটিংয়ে জয়ের জন্য মোটেও ভাবতে হয়নি বাংলাদেশকে।
এর আগে টস জিতে বোলিং নেওয়া তামিম চেয়েছিলেন শুরুতে উইকেটে থাকা সুবিধা কাজে লাগাতে। সেটি করতে গিয়ে অধিনায়ক একটু অস্থিরও ছিলেন। প্রথম ৯ ওভারের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলেন পাঁচ বোলার।
তবে এই পরিবর্তনের হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। নবম ওভারে আক্রমণে এসেই টাডিওয়ানাশে মারুমানিকে এলবিডব্লিউ করে দেন সাকিব। ভাঙে ৩৬ রানের উদ্বোধনী জুটি।
আগের ম্যাচে আঙুলে চোট পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় বাংলাদেশ খেলায় বাড়তি ব্যাটসম্যান-সোহানকে। একজন বোলারের ঘাটতি বুঝতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম বোলারের গুরু দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেন তিনি। ১৮তম ওভারে এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার বিদায় করেন ব্রেন্ডন টেইলরকে।
থিতু হয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক মিড অফের ওপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন বল। ঠিক মতো খেলতে পারেননি তিনি। একটু পিছিয়ে ক্যাচ নেন তামিম।
ওপেনিংয়ে নামা চাকাভার সঙ্গে ডিওন মায়ার্সের জুটি জমে যায় দ্রুতই। ৪৪ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তাদের জুটি এগিয়ে যাচ্ছিল আরও সামনে। মায়ার্সকে বোল্ড করে মাহমুদউল্লাহ ভাঙেন বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি।
আগের ম্যাচে ফিফটি করা ওয়েসলি মাধেভেরেকে দ্রুত ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বল ফ্লিক করার চেষ্টায় লাইন মিস করেন চাকাভা। উড়ে যায় তার অফ স্টাম্প। আগের সেরা অপরাজিত ৭৮ ছাড়িয়ে এই কিপার-ব্যাটসম্যান ৯১ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় করেন ৮৪ রান।
২৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে উদ্ধার করেন রাজা ও বার্ল। ৫১ বলে আসে তাদের পঞ্চাশ, ৭৪ বলে একশ।
ঝড়ের মূল ঝাপটা যায় মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ওপর। যখনই বোলিংয়ে এসেছেন অকাতরে রান বিলিয়েছেন তিনি।
৪৯ বলে ফিফটি করার পর বেশিদূর যেতে পারেননি রাজা। মুস্তাফিজকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় মোসাদ্দেকের চমৎকার ক্যাচে ফিরেন তিনি। ৫৪ বলে খেলা তার ৫৭ রানের ইনিংসে সাত চারের পাশে একটি ছক্কা।
৩৮ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে পৌঁছান বার্ল। ছাড়িয়ে যান আগের সেরা ৫৩। সাইফকে ছক্কার চেষ্টায় শেষ হয় তার বিস্ফোরক ইনিংস। ৪৩ বলে চারটি করে ছক্কা ও চারে করেন ৫৯।
খরুচে বোলিংয়ের পর এক ওভারেই তিন উইকেট নেন সাইফ। শেষ ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানিকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়েকে থামান মুস্তাফিজ। স্বাগতিকরা শেষ ৪ উইকেট হারায় কেবল ৪ রানে।
শেষের ভালো বোলিংয়ের পর দারুণ ব্যাটিংয়ে জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তৃতীয়বারের মতো প্রতিপক্ষকে তাদেরই মাটিতে করল হোয়াইটওয়াশ।
চমৎকার সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন তামিম। সুপার লিগে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ (চাকাভা ৮৪, মারুমানি ৮, টেইলর ২৮, মায়ার্স ৩৪, মাধেভেরে ৩, রাজা ৫৭, বার্ল ৫৯, জঙ্গুয়ে ৪* টিরিপানো ০, চাতারা ১, মুজারাবানি ০; তাসকিন ১০-১-৪৮-১, সাইফ ৮-০-৮৭-৩, মুস্তাফিজ ৯.৩-০-৫৭-৩, মাহমুদউল্লাহ ১০-০-৪৫-২, সাকিব ১০-০-৪৬-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৩-০)।
বাংলাদেশ: ৪৮ ওভারে ৩০২/৫ (লিটন ৩২, তামিম ১১২, সাকিব ৩০, মিঠুন ০, মাহমুদউল্লাহ ০, সোহান ৪৫*, আফিফ ২৬*; মুজরাবানি ৮-০-৪৩-০, চাতারা ৮-০-৫৬-০, জঙ্গুয়ে ৭-০-৪৪-১, টিরিপানো ৭-০-৬১-২, মাধেভেরে ১০-০-৪৫-২, রাজা ৫-০-২৩-০, বার্ল ৩-০-২৩-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০তে জয়ী বাংলাদেশ
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল
ম্যান অব দা সিরিজ: সাকিব আল হাসান